river, goddess ganga, woman bath in river

‘দশহরা’ কবে? কি করবেন এইদিনে? কেন পালন করা হয় এই দিনটি? জেনে নিন

‘দশহরা’ সনাতন ধর্মের একটি পবিত্র রীতি যা প্রতি বছর জৈষ্ঠ শুক্লপক্ষের দশমী তিথির দিন পালন করা হয়। স্থানীয় ভাষাতে কেউ বা হয় তো এটিকে ‘দশেরা’ও বলে থাকে। তবে প্রকৃত নাম ‘দশহরা’-ই। তার কারণ নামটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করলেই এই উৎসবের মাহাত্ম বোঝা যায়।

‘দশ’ বলতে বোঝায় দশবিধ বা ১০ প্রকার, আর ‘হরা’ বলতে বোঝায় হরণ করা বা কেড়ে নেওয়া। তাহলে মনে প্রশ্ন জাগে কী হরণ করে? কে-ই বা হরণ করে? উত্তর হল দশ প্রকার পাপ হরণ করে শ্রী গঙ্গা দেবী বা গঙ্গা মাতা।

কিন্তু এই দশপ্রকার পাপ কী কী?

১) চুরি করা – অর্থাৎ অপরের দ্রব্য না বলে নিয়ে নেওয়া।

২) হিংসা – হিংসামূলক কাজ করা যেমন কাউকে আঘাত দেওয়া।

৩) পরদারগমন – অর্থাৎ নিজের স্ত্রী ছাড়া অন্য স্ত্রীলোকের সঙ্গে মেলামেশা।

৪) পারুষ্য – কাউকে কোনো বিষয়ে কঠোর ভাবে বলা।

৫) অনৃত – অর্থাৎ মিথ্যা কথা বলা।

৬) পৈশুন্য – অন্যের সাথে কথা বলার সময় তাকে চটুল বাক্য প্রয়োগ করা (টোন-টিটকিরি)।

৭) প্রলাপ – জেনে বুঝেও পাগলের মত অনর্থক বাক্য বলে যাওয়া।

৮) অভিধ্যান – অপরের ভালো দেখে মনে মনে নিজে কষ্ট পাওয়া।

৯) অনিষ্ট চিন্তা – অপরের ভালো দেখে মনে মনে নিজে কষ্ট পাওয়ার পর সেই অপর ব্যক্তিটির সম্বন্ধে খারাপ চিন্তা করা (যেমন ওমুক কাজে তার ক্ষতি হোক ইত্যাদি)।

১০) বিতথা-অভিনিবেশ – শুভকাজ কে অস্বীকার করা, ঈশ্বর কে অস্বীকার করা, বেদ না মানা ইত্যাদি।

এই দশপ্রকার কাজ কে দশবিধ পাপ বলা হয়। এর মধ্যে প্রথম তিনটিকে আবার কায়িক পাপ বা শরীরজাত পাপ বলা হয়। পরের চারটিকে বলা হয় বাচিক পাপ বা বাক্যগত দোষ। আর শেষ তিনটিকে বলা হয় মানসপাপ বা মানসিক দোষ।

তাই দশহরার পুণ্য তিথিতে গঙ্গাস্নানের মধ্যে দিয়ে আমরা প্রতিজ্ঞা করি এখনো পর্যন্ত অজান্তে ঘটে যাওয়া এই পাপ সমূহ দেবী হরণ করে নিক আর ভবিষ্যতে এরূপ কর্মে (আমি) যেন লিপ্ত না হই।

শ্রীশ্রীগঙ্গা দশহরা তিথিতে ভাগীরথি নদীতে বহু পুণ্যার্থীদের সমাবেশ হয়। সকলে মা গঙ্গাকে পূজা করে পবিত্র স্নান করে সংকল্প নেন। কথিত আছে এই দিনেই ভগীরথ গঙ্গাদেবী কে মর্তে নিয়ে আসেন। সগর রাজার যাট হাজার সন্তানের নশ্বর দেহে প্রাণ ফেরানোর জন্য তিনি শ্রীশ্রীগঙ্গাদেবীকে পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপের কপিল মুনির আশ্রম পর্যন্ত আনয়ন করেন।

এই বছর রবিবার ১৬ই জুন, ২০২৪ (১লা আষাঢ়, ১৪৩১) তারিখে পালিত হবে দশহরা। বিশুদ্ধসিদ্ধান্ত পঞ্জিকা ‘দিবা ঘ ১১/১৩ মধ্যে হস্তানক্ষত্রযুক্ত দশমী তিথিতে দশজন্মর্জিত দশবিধ পাপক্ষয় কামনায় গঙ্গাস্নান’ – এর নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। সেদিন ব্রহ্ম মুহূর্ত থাকছে ভোর  ৩:২৮ থেকে ৪:১০ পর্যন্ত। এছাড়াও সেইদিন দিবারাত্র জুড়ে বিবিধানুষ্টান থাকছে। গঙ্গাপূজার পাশাপাশি প্রত্যেক গৃহস্থের বাড়িতে সেদিন শ্রীশ্রীমনসা পূজাও পালন করা হয়ে থাকে।







বিশুদ্ধসিদ্ধান্ত পঞ্জিকাতে গঙ্গাস্নান সমাপনের পর বা স্নান করার সময় কী মন্ত্র পাঠ্য তার উল্লেখ করা রয়েছে। মন্ত্রটি হল নিম্নরূপ –

“অদত্তানামুপাদানম্ হিংসা চৈবাবিধানতঃ।

পরদারোপসেবা চ কায়িকং ত্রিবিধং স্মৃতম্ ॥

পারুষ্যমনৃতঞ্চৈব পৈশুন্যঞ্চাপি সর্বশঃ।

অসম্বন্ধপ্রলাপশ্চ বাঙ্ময়ং স্যাচ্চতুর্বিধম্ ॥

পরদ্রব্যেষ্বভিধ্যানং মনসানিষ্টচিন্তনম্।

বিতথাভিনিবেশশ্চ ত্রিবিধং কর্ম মানসম্॥

এতানি দশপাপানি প্রশমং যান্তু জাহ্নবি।

স্নাতস্য মম তে দেবি জলে বিষ্ণুপদোদ্ভবে।

বিষ্ণু পাদার্ঘসম্ভুতে গঙ্গে ত্রিপথগামিনী।

ধর্মদ্রবীতি বিখ্যাতে পাপং মে হর জাহ্নবি।

শ্রদ্ধয়া ভক্তিসম্পন্নে শ্রীমাতর্দেবি জাহ্নবি।

অমৃতেনাম্বুনা দেবি ভাগীরথি পুণীহি মাম্ ॥”

মন্ত্রের অর্থ – চুরি, হিংসা, পরদারগমন এই তিনটি কায়িক পাপ। পারুষ্য, অনৃত, পৈশুন্য ও অসম্বদ্ধপ্রলাপ এই চারটি বাচিক পাপ। অপরের দ্রব্যে অভিধ্যান, মনের দ্বারা অনিষ্ট চিন্তা, বিতথা অভিনিবেশ এই তিনটি মানস পাপকর্ম। হে বিষ্ণুপদ থেকে সৃষ্ট জাহ্নবি (তোমার) জলে স্নান করছি, আমার এই দশ প্রকার পাপকর্মগুলিকে প্রশমিত করো। হে ভগবান বিষ্ণুর পদার্ঘ থেকে জাত, ত্রিপথগামী (স্বর্গ,মর্ত্য,পাতাল), ধর্মময়ী ভুবন বিখ্যাত দেবী গঙ্গে আমার পাপ সমূহ কে হরণ করো। শ্রদ্ধালু, ভক্তিপরায়ণা শ্রী জাহ্নবি মাতা, অমৃতজলধারা দেবী ভাগীরথি আমাকে পুণ্যতা প্রদান কর।







বিশুদ্ধসিদ্ধান্ত পঞ্জিকানুযায়ী ‘এই দিনে আরামবাগের নিকট মনসাডাঙ্গায় শ্রীশ্রীমনসাপূজা, বলিদান ও মেলা। মেদিনীপুর জেলায় কাঁথি মহকুমার অন্তর্গত মঙ্গলমাঁরো বাজারে দুই দিন ব্যাপী শ্রীশ্রীগঙ্গাপূজা ও মেলা। হাওড়া জেলান্তর্গত দক্ষিণ শিবপুরে গাদিয়াড়া গ্রামে শ্রীশ্রীগঙ্গাপূজা ও মহোৎসব’ পালিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts